ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২

মৃত্যুভয়ের ছায়ায় দেশ ছাড়লেন কোচ হাথুরুসিংহে

ক্রিকেট ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২১ ১০:৩৪:৪১
মৃত্যুভয়ের ছায়ায় দেশ ছাড়লেন কোচ হাথুরুসিংহে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক উত্তাল দিন— ছাত্র-জনতার অভূত্থানে বদলে যায় রাজনীতি, পাল্টে যায় প্রশাসন। আর সেই উত্তাল ঢেউ গিয়ে লাগে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনেও। বিসিবির সভাপতির পদ ছাড়তে হয় নাজমুল হাসান পাপনকে। তার জায়গায় আসেন সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ। নেতৃত্বে বদল মানেই নতুন সিদ্ধান্ত— আর তাতেই ঘটে সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনা: প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের আকস্মিক বরখাস্ত।

কিন্তু এটা ছিল না কোনো সাধারণ বিদায়। বরং, এটি ছিল ভয়, আতঙ্ক, এবং শঙ্কার চাদরে মোড়ানো এক গোপন প্রস্থান— যার মধ্যে লুকিয়ে ছিল মৃত্যুভয়ের চাপা সুর।

হাথুরুসিংহে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেই সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন অস্ট্রেলিয়ার একটি গণমাধ্যমে, যার সারাংশ প্রকাশ করেছে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট **Cricbuzz**।

তিনি বলেন, “ক্রিকেট বোর্ডের সিইও আমাকে সরাসরি বললেন, ‘তোমার চলে যাওয়া উচিত। কাউকে কিছু বলতে হবে না, তোমার কি টিকিট আছে?’ তখনই আমি বুঝে যাই, পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। মনে হচ্ছিল, আমি কোনো অপরাধী!”

তিনি আরও বলেন, সাধারণত তার সঙ্গে একজন গানম্যান ও ড্রাইভার থাকত। কিন্তু সেদিন শুধুই ড্রাইভার ছিল। “গানম্যানকে কোথায় পাওয়া যাবে জানতে চাইলে আমাকে বলা হয়, আজ সে আসেনি। আমার ভিতরে তখনই ভয় ঘিরে ধরে।”

এমনকি, যখন তিনি প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে ব্যাংকে যান, তখন টিভির স্ক্রিনে ভেসে উঠে ব্রেকিং নিউজ— “হাথুরুসিংহে বরখাস্ত, খেলোয়াড় লাঞ্ছনার অভিযোগ।” ব্যাংকের ম্যানেজার নিজেই এসে বলেন, “কোচ, আপনাকে একা বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না। এখন আপনি নিরাপদ নন।”

এরপর শুরু হয় তার পালানোর পরিকল্পনা। “আমার এক বন্ধু আমাকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মধ্যরাতের ফ্লাইটে তুলে দেয়। আমি হুডি আর টুপি পরে ছিলাম, যেন কেউ চিনতে না পারে। মনে হচ্ছিল, যে কোনো মুহূর্তে আমাকে ধরা হতে পারে।”

সবচেয়ে ভয়ানক ছিল বিমানবন্দরে প্রবেশের মুহূর্ত। “আমার মাথায় তখন বারবার ঘুরছিল সেই ঘটনার কথা, যখন আগের এক মন্ত্রীকে রানওয়েতে নামিয়ে আনা হয়েছিল। ভাবছিলাম, আমার ক্ষেত্রেও এমন কিছু হবে না তো?”

কিন্তু ঠিক তখনই ঘটে এক আবেগঘন ঘটনা। এক বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা এগিয়ে এসে বলেন, “আমি দুঃখিত কোচ, আপনি চলে যাচ্ছেন। আপনি আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন।”

হাথুরু বলেন, “আমি তখন নিজের প্রাণ নিয়ে শঙ্কিত, আর তিনি আমার অবদানের কথা বলছিলেন। এই মুহূর্তটি আমার জীবনের সবচেয়ে অস্থির ও আবেগঘন মুহূর্তগুলোর একটি।”

এই পুরো ঘটনা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়— খেলাধুলা আর রাজনীতি কখনো কখনো কতটা অদ্ভুতভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। হাথুরুসিংহের এই বিদায় তাই শুধু চাকরি হারানোর গল্প নয়, এটি এক পেশাদার কোচের নিঃশ্বাস আটকে আসা আতঙ্কময় বিদায়ের দিনলিপি।

সাকিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ