আহত হনুমান! নিজেই ফার্মেসিতে এসে চিকিৎসা নিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভাবছেন, হনুমানটি হয়তো কলা বা অন্য কিছু খেতে এসেছিল? মোটেও না! সে এসেছিল তার আহত হাতের চিকিৎসা করাতে। দেখে মনে হচ্ছিল যেন বলছে, "ব্যথা পাচ্ছি, আমাকে সাহায্য করো।" এমন দৃশ্য কি কখনো দেখেছেন? এক ক্ষতবিক্ষত হাত, এক নিঃশব্দ যন্ত্রণায় কাতর, আর একটি অদ্ভুত বিশ্বাস—হয়তো সে জানতো না ফার্মেসিতে পশুদের চিকিৎসা হয় কিনা, তবে বিশ্বাস ছিল যে এখানে হয়তো তাকে কিছু সাহায্য মিলবে।

এটি ঘটেছিল মেহেরপুর শহরের কাছারি বাজারের একটি ফার্মেসিতে, যেখানে ছিল বসুন্ধরা ডায়মন্ডের মতো একটি পরিচিত হটস্পট। দোকানীরা তাদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল, হঠাৎ করে দোকানে ঢুকে পড়ে একটি পূর্ণবয়স্ক হনুমান। প্রথমে দোকানীরা ভেবেছিল, হয়তো ক্ষুধার্ত, তাই তারা কলা ও পাওরুটি এগিয়ে দেয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, হনুমানটি খাওয়ার দিকে একটাও তাকায়নি। সে এক দৃষ্টিতে শুধু তার ডান হাতের দিকে তাকিয়ে ছিল।

দোকানীরা প্রথমে ভয়ে কাঁপছিল, কারণ এমন কিছু তারা কখনো কল্পনা করেনি। সাধারণত হনুমানরা মানুষের কাছে ভয় তৈরি করে, কিন্তু এই হনুমানটি ছিল শান্ত এবং স্বাভাবিক। দোকানের মালিক বলছিলেন, "এটা অসম্ভব! হনুমান এখানে কী করছে?" পরে তারা বুঝতে পারল, হনুমানটির আসল প্রয়োজন ছিল চিকিৎসা। তার হাতে গভীর ক্ষত ছিল, রক্ত জমাট বাঁধলেও যন্ত্রণায় সে শান্তি পাচ্ছিল না।

দোকান মালিক দ্রুত বায়োডিন দিয়ে হাতের ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করেন এবং ব্যান্ডেজ করে যত্ন নেন। চিকিৎসা পাওয়ার পর হনুমানটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এবং কিছু সময়ের জন্য ফার্মেসির টেবিলে আরাম করে বসে থাকে, যেন নিশ্চিত হতে চায় সে পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে কিনা। পরে কিছুটা আরাম পেয়ে, ধীরে ধীরে টেবিল থেকে নেমে এক পা এক পা করে দোকান থেকে চলে যায়।

এটা একটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা, যেখানে একটি প্রাণী নিজে এসে ফার্মেসিতে চিকিৎসা নিতে এসেছে। মেহেরপুরে ৭০ থেকে ৮০টি হনুমান রয়েছে, তবে তারা সাধারণত দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায় এবং কোথাও স্থায়ীভাবে থাকে না। এমনকি যদি কখনো তারা বিপদে পড়ে বা আক্রমণ করে, বনবিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।

এটি একটি বাস্তব উদাহরণ, যা আমাদের প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তা এবং পরিবেশ সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। হনুমান, যেটি সাধারণত বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে পরিচিত, তার ব্যথা বোঝানোর এবং চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছে আসার ঘটনা সত্যিই চমকপ্রদ। এটি এমন একটি দৃষ্টান্ত, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, বুদ্ধিমত্তার সীমানা শুধু মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

সোহাগ/