ঢাকা, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নতুন দলে নুরুর দলের ২০ নেতা, ১০ কোটি টাকা ও এমপি পদের প্রলোভন: যা জানা গেল

২০২৫ মার্চ ০৬ ১২:৪৯:৩৮
নতুন দলে নুরুর দলের ২০ নেতা, ১০ কোটি টাকা ও এমপি পদের প্রলোভন: যা জানা গেল

নিজস্ব প্রতিবেদক: নুরুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসু’র সাবেক ভিপি, নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। নুরুল হক দাবি করেছেন, এনসিপি তার দলের বেশ কয়েকজন নেতাকে ১০ কোটি টাকা ও এমপি (সংসদ সদস্য) করার প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের দলে নিয়ে এসেছে। তবে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন এই অভিযোগটি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং প্রমাণ ছাড়া এসব মন্তব্যকে রাজনৈতিক ধোঁয়াশা সৃষ্টি করার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছেন।

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সালে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এনসিপি আত্মপ্রকাশ করে। দলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন নাহিদ ইসলাম, যিনি আগে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। দলের আত্মপ্রকাশের পর ১ মার্চ বিকেলে, নুরুল হক সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের দুটি ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগের আহ্বান জানান এবং জুলাই আন্দোলনকেন্দ্রিক ছাত্রনেতাদের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তোলেন। এর মধ্যে রয়েছে তদবির, নিয়োগ, টেন্ডার-বাণিজ্য এবং অন্যান্য অনৈতিক কর্মকাণ্ড, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ এক টক শোতে নুরুল হকের অভিযোগের জবাব দেন। তিনি বলেন, "নুরুল হক নিজেই তাঁর দল বিলুপ্ত করার পর আমাদের (এনসিপি) সঙ্গে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আমরা বলেছি, আমাদের আদর্শিকভাবে অনেক মিল রয়েছে, তবে আমরা প্রথমে কোনো দল বিলুপ্ত করতে চাইনি। ভবিষ্যতে একসাথে কাজ করা যেতে পারে।"

এদিকে, নুরুল হক দাবি করেছেন যে, তিনি এনসিপিতে যোগ দিতে চাননি, বরং এনসিপির নেতাদের গণ অধিকার পরিষদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তবে, জানা গেছে যে, নুরুল হকের দলের অন্তত ২০ জন নেতা এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন এবং তারা এনসিপির আহ্বায়ক কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পেয়েছেন। এসব নেতার মধ্যে অনেকেই গণ অধিকার পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু নেতা ৫ আগস্টের আগে এবং বাকিরা ৫ আগস্টের পরে দল ছাড়েন।

এনসিপির নেতারা মনে করছেন, নুরুল হকের দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এনসিপিতে যোগ দেওয়ায়, তাঁর দল সংকটে পড়েছে। এই কারণে, নুরুল হক এনসিপির নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন।

বর্তমানে ইউরোপ সফরে থাকা নুরুল হক গতকাল প্রথম আলোকে ফোনে বলেন, "নতুন দলের উদ্যোক্তারা আমাদের দলের অনেককে ১০ কোটি টাকা ও এমপি বানানোর প্রলোভন দিয়েছে। এতে কয়েকজন বিভ্রান্ত হয়েছেন।"

এ বিষয়ে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, "এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের অভিযোগ রাজনৈতিক ধোঁয়াশা সৃষ্টি করার চেষ্টা।"

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, "গণ অধিকার পরিষদ থেকে আমাদের দলে আসা নেতাদের বেশিরভাগই দীর্ঘদিন আগে ওই দল ছেড়েছিলেন। নুরুল হকের অনেক ব্যক্তিগত ভুলের কারণে তারা নতুন দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নুরুল হকের অভিযোগগুলো প্রমাণযোগ্য নয় এবং সেগুলি দায়িত্বজ্ঞানহীন।"

এনসিপিতে যোগ দেওয়া নুরুল হকের দলের নেতাদের মধ্যে রয়েছেন আবু হানিফ, হানিফ খান সজীব, আব্দুজ জাহের, মো. রাসেল আহমেদ, মো. নিজাম উদ্দিন, আরিফুল ইসলাম আদীব, আকরাম হুসেইন, তারিকুল ইসলাম, মোল্যা রহমতুল্লাহ, আসাদ বিন রনি এবং অন্যান্যরা।

বিশ্লেষকদের মতে, জুলাই আন্দোলনের পর নতুন দল গঠনের কারণে গণ অধিকার পরিষদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং নুরুল হক নতুন দলের উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলছেন, যা রাজনীতিতে নতুন এক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।

সিদ্দিকা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ