ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ওয়ানডে ক্রিকেটে মুশফিকের অনবদ্য রেকর্ড

ক্রিকেট ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মার্চ ০৬ ১১:৪২:১৪
ওয়ানডে ক্রিকেটে মুশফিকের অনবদ্য রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে মুশফিকুর রহিমের নাম এক গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রায় ১৯ বছরের দীর্ঘ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিনি অনেক রেকর্ড ও অর্জন অর্জন করেছেন, যদিও দলের শিরোপা সংখ্যা অতটা বেশি নয়। তবে ব্যক্তিগত অর্জনের দিক থেকে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। তার হাত ধরেই অনেক প্রথমবারের ঘটনা ঘটেছে এবং অনেক রেকর্ড নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যেখানে তিনি বহু প্রাক্তন ক্রিকেটারকে ছাড়িয়ে গেছেন।

এখন, ২০২৫ সালের বুধবার রাতে মুশফিক তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। আর তাকে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে আর মাঠে দেখা যাবে না। তবে বিদায়ের এই মুহূর্তে তার অসাধারণ অর্জনগুলো একবার পুনরায় তুলে ধরলে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার অবদান আরও স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়।

রেকর্ডের নতুন দিগন্ত

মুশফিক বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১২৪টি ওয়ানডে ম্যাচ জয়ের রেকর্ড গড়েছেন। তার পরেই আছেন সাকিব আল হাসান (১১৭ জয়), মাহমুদউল্লাহ এবং তামিম ইকবাল (প্রতিটি ১০৯ জয়)।

এছাড়া, মুশফিক ২৭৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার রেকর্ডও গড়েছেন, যা অন্য কোনো ক্রিকেটারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় স্থানে আছেন, যিনি ২৪৭টি ওয়ানডে খেলেছেন।

টানা খেলার রেকর্ড

বাংলাদেশের হয়ে টানা সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার রেকর্ডও মুশফিকের দখলে। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি টানা ৯২টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। তার আগে রেকর্ডটি ছিল তামিম ইকবালের, যিনি ৮৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন।

ঝড়ের নাম মুশফিক

বাংলাদেশের দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির রেকর্ডও মুশফিকের দখলে। ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে মাত্র ৬০ বলে ১০০ রান পূর্ণ করেছিলেন তিনি, যেখানে ছিল ১৪টি চার এবং ২টি ছক্কা। একই বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৯ বলে সেঞ্চুরি করে দেশের চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরির কীর্তিও তার।

রানে দ্বিতীয়, সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয়

মুশফিক ওয়ানডেতে ৭,৭৯৫ রান করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ৯টি সেঞ্চুরি। তার পরেই আছেন তামিম ইকবাল, যিনি ১৪ সেঞ্চুরিতে ৮,৩৫৭ রান করেছেন।

ছক্কা-রেকর্ড

বাংলাদেশের হয়ে ছক্কার সেঞ্চুরি করা তিন ব্যাটসম্যানের মধ্যে মুশফিকও একজন। তার ক্যারিয়ারে ১০০টি ছক্কা হয়েছে, যা একটি বড় মাইলফলক। তামিম ইকবালের ১০৩টি এবং মাহমুদউল্লাহর ১০৭টি ছক্কার রেকর্ডের পর মুশফিকের নাম রয়েছে।

কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে রেকর্ড

২৭৪টি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে ২৬০টি ম্যাচেই মুশফিক উইকেট কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। এই ক্যাটেগরিতে কেবল চারজন কিপারের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছেন—কুমার সাঙ্গাকারা (৩৬০ ম্যাচ), মাহেন্দ্র সিং ধোনি (৩৫০), মার্ক বাউচার (২৯৪) এবং অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (২৮২)। কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে তার রান সংগ্রহ ৭,২৫৪, যেখানে তিনি সাঙ্গাকারা, গিলক্রিস্ট এবং ধোনির পরে রয়েছেন।

কিপিং গ্লাভসে রাজত্ব

কিপিং গ্লাভসে মুশফিক ২৪১টি ক্যাচ নিয়েছেন এবং ৫৬টি স্টাম্পিং করেছেন, যার ফলে তার মোট ডিসমিসাল হয়েছে ২৯৭টি, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ডটি ছিল খালেদ মাসুদের (১২৬ ডিসমিসাল)।

কিপিং রেকর্ডে আক্ষেপ

ওয়ানডে ইতিহাসে তিনশো ডিসমিসালের রেকর্ড গড়তে মুশফিক মাত্র তিনটি ডিসমিসাল দূরে ছিলেন। তবে তার কিপিং ক্যারিয়ার ২৯৭ ডিসমিসালেই শেষ হয়েছে। সবার ওপরে আছেন কুমার সাঙ্গাকারা (৪৮২ ডিসমিসাল), অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (৪৭২) এবং মাহেন্দ্র সিং ধোনি (৪৪৪)।

পাঁচের জোড়া

মুশফিক একমাত্র কিপার যিনি এক ওয়ানডেতে পাঁচটি ক্যাচ নিয়েছেন। দুই দফায় এই কীর্তি তিনি গড়েছেন, এবং এক ম্যাচে পাঁচটি ডিসমিসাল করার রেকর্ডও তারই।

সেরা জুটি

বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মুশফিকের জুটি সবচেয়ে সফল। তাদের অংশীদারিত্বে এসেছে ৩,৫৪৫ রান, যা বাংলাদেশের অন্য কোনো জুটির পক্ষে সম্ভব হয়নি। এছাড়া, মাহমুদউল্লাহ এবং তামিম ইকবালের সঙ্গেও তার সেরা জুটিগুলোর মধ্যে রেকর্ড রয়েছে।

অধিনায়কত্ব

মুশফিক ৩৭টি ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা তামিম ইকবালের সমান। তবে তাদের চেয়ে বেশি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন আরও চারজন ক্রিকেটার।

মুশফিকুর রহিমের ওয়ানডে ক্যারিয়ার বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের একটি অমূল্য অংশ হয়ে থাকবে, যেখানে তার প্রতিটি অর্জন ও রেকর্ড ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

হাসান/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ