ঢাকা, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎতে বড় অনিশ্চয়তা

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৭ ২২:১৭:৫৯
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎতে বড় অনিশ্চয়তা

পাবনার রূপপুরে নির্মিত দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এখনও জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়নি। যদিও প্রায় দেড় বছর আগে ইউনিট-১ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা ছিল, বাস্তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে সরবরাহ বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি।

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৩টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সঞ্চালন লাইন ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে।

২৩০ কেভি রূপপুর-বাঘাবাড়ি ডাবল সার্কিট লাইন – সম্পন্ন হয়েছে ২০২২ সালের জুনে।

৪০০ কেভি রূপপুর-বগুড়া সিঙ্গেল সার্কিট লাইন – শেষ হয়েছে ২০২৪ সালের এপ্রিল।

৪০০ কেভি রূপপুর-গোপালগঞ্জ সিঙ্গেল সার্কিট লাইন – শেষ হয়েছে ২০২৫ সালের জুনে।

এই তিনটি লাইনের সম্মিলিত সঞ্চালন সক্ষমতা ৪ হাজার মেগাওয়াট, যা ইউনিট-১ থেকে উৎপাদিত ১,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যথেষ্ট।

তবে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর আগে আরও কিছু কারিগরি প্রস্তুতির দরকার রয়েছে। বিশেষ করে, সাবস্টেশন ও ট্রান্সফরমার স্থাপনসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনো বাকি।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইউনিট-১ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়। এখন সেটিও অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। একইভাবে ইউনিট-২ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময়সীমা ২০২৫ সালের পরিবর্তে ২০২৭ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে পারে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু না হওয়ায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা বলছে, সিস্টেম প্রস্তুত থাকলেও প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ না আসায় হুইলিং চার্জ আয় হচ্ছে না।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি প্রস্তাব দেয়, অন্তত ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ‘পাওয়ার স্টার্ট-আপ’ শুরু করা হোক। কিন্তু রাশিয়ান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এর জন্য ৪০০ কেভি রূপপুর-গোপালগঞ্জ লাইনের পাশাপাশি বগুড়ার লাইনও ব্যবহারের দাবি জানায়, যদিও প্রযুক্তিগতভাবে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

এছাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো—২৩০ কেভি গ্যাস ইনসুলেটেড সাবস্টেশন (জিআইএস)—আজও পুরোপুরি চালু হয়নি। এই লাইনের মাধ্যমে বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করা হচ্ছে অস্থায়ী ব্যবস্থায়, যা জাতীয় গ্রিডের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্পষ্ট সময়সূচি ও দায়বদ্ধতার অভাব প্রকল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রকল্প পরিচালক মো. কবীর হোসেন জানিয়েছেন, সঞ্চালন লাইনের কাজ প্রায় শেষ। চুল্লিতে পরীক্ষামূলকভাবে ‘ডামি’ ফুয়েল ঢোকানো হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই প্রকৃত পারমাণবিক জ্বালানি ঢোকানো হবে, যার পর তিন মাসের প্রস্তুতির পর ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। তবে জাতীয় গ্রিডে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ সম্ভব হবে কি না, তা এখনও নিশ্চিত নয়।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ প্রায় শেষ হলেও কারিগরি জটিলতা ও সমন্বয়ের অভাবে এখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়নি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্পষ্টতা ও সিদ্ধান্তহীনতা প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ