ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

ভারতকে ঘিরে কৌশলগত বলয়ে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১০:৫৪:২৯
ভারতকে ঘিরে কৌশলগত বলয়ে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন এক উত্তেজনার ইঙ্গিত মিলেছে। চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে ঘিরে একটি সম্ভাব্য ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। ভারতের ‘ইন্ডিয়া ডটকম’ এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, এই তিন দেশ এক ধরনের আঞ্চলিক জোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা ভারতের কৌশলগত ভারসাম্যে বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে পারে।

সম্প্রতি চীনের কুনমিং শহরে অনুষ্ঠিত হয় একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক। সেখানে অংশ নেন চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ।

বৈঠকে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। চীন জানিয়েছে, এই উদ্যোগ কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়; এটি আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি নতুন ধারা। তবে ভারতের কূটনৈতিক মহলে এ নিয়ে রয়েছে গভীর উদ্বেগ। তাদের মতে, এটি একটি পরিকল্পিত কৌশল, যার মাধ্যমে ভারতকে চারদিক থেকে কৌশলগত চাপে রাখা হচ্ছে।

ভারতের দৃষ্টিতে, পাকিস্তানের সঙ্গে ঐতিহ্যগত ঘনিষ্ঠতা এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সদ্য গড়ে ওঠা সম্পর্কের মাধ্যমে চীন ভারতের প্রভাববলয়কে দুর্বল করে দিচ্ছে। এক সময় দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশও এখন নতুন জোটের দিকে ঝুঁকছে বলে মনে করছে ভারতীয় বিশ্লেষকরা।

বিশেষত, পাকিস্তানের নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকা ও ইসলামাবাদের মধ্যে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে, যেখানে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টিও ভারতের নজর এড়ায়নি।

আরও বড় চমক তৈরি করেছে চীনা প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের একটি পদক্ষেপ। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং তার জন্য পাঠানো হয় একটি বিশেষ চার্টার্ড বিমান। ভারতের মতে, এটি শুধুমাত্র সৌজন্যমূলক পদক্ষেপ নয়, বরং একটি কৌশলগত বার্তা।

ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে চীন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একটি যৌথ বিবৃতিতে জানায়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করতে তারা একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করবে। ভারতের মতে, এখানেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের কৌশলগত সঙ্কেত।

কারণ, ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর ঘিরে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI) আগে থেকেই সক্রিয়। এখন বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এই বলয়ের অংশ হয়ে উঠলে ভারতের বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা কৌশলে বড় বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে। ভারত যেখানে একসময় নিরঙ্কুশ প্রভাব বজায় রেখেছিল, সেখানে এখন তাকে চীন নেতৃত্বাধীন এক নতুন কূটনৈতিক বলয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে— যা পরিপূর্ণভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে নয়াদিল্লির আঞ্চলিক আধিপত্যকে।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ