ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা ভাতা নিচ্ছে

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ০২ ১৭:৪৬:৫৩
৯০ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা ভাতা নিচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। ১৯৯৪ সালে সরকারি তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার। অথচ ২০২৪ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৫০ জনে। প্রশ্ন উঠছে—এই বাড়তি ১ লাখ ২২ হাজার জন কারা?

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে অন্তত ৯০ হাজারের বেশি ব্যক্তি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা—এমন অভিযোগ উঠেছে। এদের শনাক্তে শুরু হয়েছে সরকারিভাবে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ।

বর্তমানে একজন মুক্তিযোদ্ধা বছরে গড়ে পান প্রায় ২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ভাতা। সে হিসাবে প্রতি বছর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ক্ষতি হচ্ছে আনুমানিক ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

এরই মধ্যে জামুকার তত্ত্বাবধানে প্রথম পর্যায়ের যাচাই কার্যক্রম শুরু হয়েছে কুমিল্লা জেলায়। সোমবার (২ জুন) কুমিল্লা সার্কিট হাউসে ৩১ জনের বিরুদ্ধে শুনানি হয়। জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন জানান, “ঢাকায় বসে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই সরেজমিনে গিয়ে সাক্ষ্য-প্রমাণ যাচাই করছি।”

গত ১৫ বছরে বয়স, কাগজপত্রে অসঙ্গতি ও ভুয়া দাবি প্রমাণিত হওয়ায় ৩,৯২৬ জনের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ২,১১১ জনের বয়স ছিল ১৯৭১ সালে নির্ধারিত যোগ্যতার (১২ বছর ৬ মাস) চেয়েও কম, যা তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বর্তমানে একজন মুক্তিযোদ্ধা মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পান। এর পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে ২০ হাজার, স্বাধীনতা দিবসে ৫ হাজার এবং বাংলা নববর্ষে ২০ হাজার টাকার অতিরিক্ত ভাতাও দেওয়া হয়। যোদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এই পরিমাণ আরও বেশি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান বীর প্রতীক ফারুকি আজম। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও জামুকায় অভিযোগ জমা কার্যক্রম শুরু হয়।

সরকার বলছে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও রাষ্ট্রীয় অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করাই এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ