ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

সংস্কারহীন নির্বাচনের পেছনে ভারতের ভূমিকাই কি মূল ষড়যন্ত্র

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মে ৩০ ১৬:৫৫:৩৪
সংস্কারহীন নির্বাচনের পেছনে ভারতের ভূমিকাই কি মূল ষড়যন্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ এখন একটি ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম-খুন, রাষ্ট্রীয় দমননীতি, রাতের ভোটসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে জনরোষে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার, যার নেতৃত্বে আছেন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিপ্রাপ্ত শান্তিকর্মী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস।

দেশের ছাত্রসমাজ, নাগরিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত দাবির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মধ্য দিয়েই গঠিত হয় এই অন্তর্বর্তী সরকার। এর প্রধান লক্ষ্য—একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

তবে এমন পরিবর্তনের মাঝেই ঘনীভূত হচ্ছে নতুন এক চক্রান্ত। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, ভারতের বর্তমান মোদি প্রশাসন চায় বাংলাদেশে কোনো সংস্কার ছাড়াই একটি তথাকথিত “গণতান্ত্রিক” নির্বাচন হোক—যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলোকেই আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার পথ সহজ হবে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক মহলে ছড়ানো হচ্ছে প্রচার—“অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো জনগণসমর্থন নেই”। অথচ বিশ্লেষকদের মতে, এই সরকার এসেছে জনগণের রক্তাক্ত আন্দোলনের পথ বেয়ে—কোনো গোপন সমঝোতা কিংবা বিদেশি সমর্থন নয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনুস কোনো ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ চরিত্র নন। বরং তিনিই ছিলেন সংকটকালে দেশের প্রতি দায়িত্বশীল এক নেতৃত্ব, যিনি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষাহীন অবস্থান থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রেখেছেন।

নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে উঠে আসছে ভারতের দ্বৈত ভূমিকার প্রশ্ন। যখন শেখ হাসিনা মৃত ভোটার দিয়ে ভোট করতেন, বিরোধীদের কারাবন্দি করতেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাতেন—তখন দিল্লি নীরব থাকত। অথচ এখন গণতান্ত্রিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে সুর তুলেছে ভারত—এটি কি নিছক কূটনৈতিক কাকতালীয়তা, নাকি সুপরিকল্পিত ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কৌশল?

সম্প্রতি জাপানের *নিক্কেই ফোরাম*-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস জানান, “আমার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাশা নেই। আমি কেবল জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চাই, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে।”

তিনি বলেন, নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। প্রাথমিকভাবে ডিসেম্বর লক্ষ্য হলেও রাজনৈতিক সংলাপ ও বাস্তবতার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনে সময় বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই ভোট শেষ করা হবে।

সীমান্তবর্তী দুই দেশের সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রসঙ্গেও ড. ইউনুস বলেন, “এশিয়ার ভবিষ্যৎ শূন্য সমষ্টিক ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় নয়, বরং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়া উচিত।” যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ায় তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের উভয় নেতার প্রশংসা করেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সংস্কারবিহীন নির্বাচনের পক্ষে ভারতের কণ্ঠস্বর কেবল বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপই নয়, বরং আঞ্চলিক গণতন্ত্রের জন্যও এক উদ্বেগজনক বার্তা। বাংলাদেশের জনগণ এখন ইতিহাসের এক সংবেদনশীল মোড়ে দাঁড়িয়ে—এখানে নির্বাচন কবে হবে, তা নয়—কীভাবে ও কোন ভিত্তিতে হবে, সেটিই মূল প্রশ্ন।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ