ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

সেনাপ্রধানের মন্তব্য সংবিধান লঙ্ঘনের ইঙ্গিত

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মে ২৪ ১৮:০৩:৪২
সেনাপ্রধানের মন্তব্য সংবিধান লঙ্ঘনের ইঙ্গিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীর প্রধানের কিছু মন্তব্য ঘিরে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। অনেকে মনে করছেন, এসব বক্তব্য যদি সত্য হয়, তাহলে তা শুধু পেশাগত সীমার লঙ্ঘনই নয়— বরং এটি দেশের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্যও এক ধরনের হুমকি।

গণমাধ্যমে উঠে আসা এক বক্তব্যে সেনাপ্রধান দেশকে “অভিভাবকহীন” বলে উল্লেখ করেন। অথচ সংবিধান বলবৎ রয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও কার্যকরভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত। এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে— অভিভাবকহীনতা বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত একটি ঐকমত্যভিত্তিক সরকার— যার পেছনে রয়েছে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের সম্মতি ও জনগণের প্রত্যক্ষ সমর্থন। একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কি আদৌ সেনাবাহিনীর কোনো কর্মকর্তার এখতিয়ারভুক্ত বিষয়?

বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাবাহিনীর দায়িত্ব জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক বিতর্কে অংশগ্রহণ নয়। সংবিধান ও চাকরিবিধি অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর উচিত নিরপেক্ষ ও পেশাদার অবস্থানে থাকা। কোনো বাহিনীর পক্ষ থেকে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া শুধু অনভিপ্রেতই নয়, বরং তা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নীতিমালার বিরোধী।

বিভিন্ন সূত্র মতে, সেনাপ্রধানের কিছু মন্তব্য ভারতীয় গণমাধ্যমে গত এক বছরে প্রকাশিত কথাবার্তার সঙ্গে বিস্ময়করভাবে সাযুজ্যপূর্ণ। এতে করে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে আশঙ্কা জেগেছে— এক-এগারোর ছায়া কি আবার ফিরে আসছে? আমরা কি ২০০৭ সালের মতো আরেকটি ‘বহিরাগত পরিকল্পনার’ পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছি?

এই দেশের জন্ম হয়েছে রক্ত দিয়ে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ হোক কিংবা ২০২৪-এর গণআন্দোলন— বাংলাদেশের জনগণ বারবার তাদের অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। তাই এই দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টা জনগণের প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়বে।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে ৬৬ শতাংশের মৃত্যু ঘটেছে সরাসরি লিথাল অস্ত্রের ব্যবহারে— যা কেবল সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও বিজিবির মতো সংস্থাগুলোর কাছে থাকে। এতে করে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, এসব অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ কারা দিয়েছিল?

এনিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের স্পষ্ট বার্তা— রাষ্ট্রের বাহিনীসমূহ যেন তাদের সংবিধান-নির্ধারিত ভূমিকায় অবিচল থাকে। দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বই হোক বাহিনীগুলোর পরিচয়।

আমরা মনে করি, সেনাবাহিনী বাংলাদেশের গৌরবের অংশ। তারা হোন দেশের পতাকার প্রকৃত রক্ষক— জনগণের সেবক। আমরা চাই না তারা আবার ২০০৭ সালের মতো রাজনৈতিক নাটকের চরিত্র হয়ে উঠুক। ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে— বিদেশি চাপ ও অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে যে পথচলা শুরু হয়, তা কখনোই দেশ ও জনগণের কল্যাণ বয়ে আনে না।

আজকের বাংলাদেশ ১৭৫৭ সালের পলাশী নয়। এ দেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র— যেখানে শাসনব্যবস্থা নির্ধারিত হবে জনগণের ইচ্ছায়, পেশাদার বাহিনীর হস্তক্ষেপে নয়।

সর্বোপরি, আমরা আশা করি— সেনাবাহিনী হোক দায়িত্বশীল, সংবেদনশীল এবং পেশাদার। ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়িয়ে হোক তারা বাংলাদেশের সাহসিক ও গৌরবময় সেনানায়ক।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ