ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

ড. ইউনূস পদত্যাগ করলে বাংলাদেশ যে ভয়াবহ সংকটে পড়তে পারে

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মে ২৪ ১৬:৫৯:৩৮
ড. ইউনূস পদত্যাগ করলে বাংলাদেশ যে ভয়াবহ সংকটে পড়তে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন উত্তেজনা চরমে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্ভাব্য পদত্যাগ নিয়ে দেশজুড়ে জোর গুঞ্জন চলছে। অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে এই খবর সাধারণ মানুষের মাঝেও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে— যদি সত্যিই ড. ইউনূস সরে দাঁড়ান, তাহলে কি বাংলাদেশ আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে?

গত জুলাইয়ের গণআন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. ইউনূস। শুরুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার নেতৃত্বের প্রশংসা হলেও, সময়ের সাথে সেই আস্থা ভেঙে পড়ছে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, এবং ছাত্রনেতা-সহ বেশ কিছু দল এখন সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব, সমন্বয়হীনতা ও ব্যর্থতার অভিযোগ তুলছে।

বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো সংবাদমাধ্যমে আসে ড. ইউনূসের পদত্যাগের সম্ভাবনার খবর। এরপর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় আলোচনার ঝড়। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই মুহূর্তে যদি তিনি সরে দাঁড়ান, তবে দেশ এক ভয়াবহ রাজনৈতিক শূন্যতার মুখে পড়তে পারে।

জাতীয় দৈনিক *যুগান্তর*-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল্লাহ বলেন, “এই মুহূর্তে ড. ইউনূসের পদত্যাগ জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।” তার মতে, দেশের রাজনৈতিক কাঠামো এখনো এতটা শক্তপোক্ত হয়নি যে, এই ধরণের সংকট সহজে সামাল দিতে পারবে। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী শক্তিগুলো, বিশেষ করে ভারত, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করতে পারে।

‘সুজন’-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের সরে যাওয়া মানে দেশের কার্যকারিতা প্রায় সম্পূর্ণরূপে স্থবির হয়ে পড়বে। এই অস্থিরতা দীর্ঘমেয়াদে প্রজন্মের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে যদি বিভাজন ও আস্থার সংকট বাড়ে, তাহলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও ঘনীভূত হবে, এবং বিরোধী শক্তি এই দুর্বলতা কাজে লাগাতে পারে।”

ড. ইউনূসের সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত যেমন— করিডর ইস্যু ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনার বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রস্তাব— তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এসব সিদ্ধান্ত সরকারের নিরপেক্ষতা ও দেশের স্বার্থের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মো. মাহবুবুর রহমান মনে করেন, “সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ উপদেষ্টাদের একাংশের নির্লিপ্ত আচরণ। অনেকেই আগেও নিরব ছিলেন, এখনো সেই অবস্থান থেকে সরে আসতে পারেননি।”

বিশ্লেষকদের মতে, দোষারোপ নয়— এখন প্রয়োজন ঐক্য, সংলাপ ও সমঝোতা। যদি ড. ইউনূস সত্যিই পদত্যাগ করেন, সেটি কেবল সরকারের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য গভীর অনিশ্চয়তার বার্তা নিয়ে আসবে।

এখন সময় সিদ্ধান্ত নেওয়ার নয়— সময় একসাথে পথ খোঁজার। জাতীয় স্বার্থে সংলাপ, সহযোগিতা এবং ঐক্যের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি এই মুহূর্তে।

আশা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ