সদ্য সংবাদ
‘চিকেনস নেক’ করিডরে ভারতের সামরিক মহড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের অন্যতম সংবেদনশীল ও কৌশলগত অঞ্চল ‘চিকেনস নেক’ আবারো আলোচনার কেন্দ্রে। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডর নামেও পরিচিত এই করিডরটি ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে রেখেছে। ভৌগোলিকভাবে মাত্র ১৭ কিলোমিটার প্রশস্ত এই অংশকে বলা হয় ভারতের ‘স্ট্র্যাটেজিক বটলনেক’।
সম্প্রতি, এই করিডরের খুব কাছেই—তিস্তা নদীর অববাহিকায়—‘তিস্তা প্রহার’ নামে এক তিনদিনব্যাপী সামরিক মহড়া চালিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এত বড় পরিসরে, এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আগে কখনও এমন মহড়ার নজির দেখা যায়নি। আর তাই এটিকে নিছক একটি রুটিন মহড়া না বলে কৌশলগত বার্তাবাহী পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল নদীঘেরা জটিল ভূখণ্ডে যুদ্ধের প্রস্তুতি, আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগ এবং দ্রুত গতিতে অভিযানের সক্ষমতা প্রদর্শন। মহড়ায় অংশ নেয় আর্টিলারি ট্যাংক, অ্যাটাক হেলিকপ্টার, সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম এবং উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি।
দিল্লির একটি সামরিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, “তিস্তা অঞ্চলে এত বড় আকারে ভারত এর আগে কখনও সামরিক মহড়া চালায়নি।” ফলে প্রশ্ন উঠেছে—এই প্রদর্শনী কি কেবলই অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতির অংশ, নাকি এর পেছনে রয়েছে প্রতিবেশী কোনো দেশের প্রতি কৌশলগত বার্তা?
লন্ডনভিত্তিক বিশ্লেষক প্রিয়জিত দেব সরকার বলেন, “এই মহড়ার মধ্য দিয়ে সূক্ষ্ম এক বার্তা দেওয়া হয়েছে—যেটি বিশেষভাবে বাংলাদেশকে ভাবিয়ে তুলতে পারে।”তিনি মনে করেন, ভারত শুধু নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে না, বরং স্পষ্টভাবে বোঝাতে চাইছে এই করিডরের গুরুত্ব এবং ভারতের প্রস্তুতি।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস মন্তব্য করেছিলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের জন্য একমাত্র সমুদ্রগামী প্রবেশপথ হলো বাংলাদেশ।”এই মন্তব্যের ঠিক পরপরই ভারতের এই অঞ্চলে সেনা তৎপরতা চোখে পড়ার মতোভাবে বেড়েছে।
বর্তমানে ‘চিকেনস নেক’ করিডরে অবস্থান করছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ত্রিশক্তি কোর্পস—সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায়।এই পরিস্থিতিতে এটিকে শুধু মহড়া হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। বরং এটি ভারতের কৌশলগত মনোভাব এবং প্রতিবেশীদের প্রতি একটি সরাসরি বার্তা বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।