ঢাকা, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশ কিভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন পথ দেখাচ্ছে

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২০ ১১:১৪:৪৫
বাংলাদেশ কিভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন পথ দেখাচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার বিকেল আজ এক অদ্ভুত শান্তিতে ভরা। গাছের পাতায় ঝিরঝিরে আলো ঝরে পড়ছে, আকাশে সাদা মেঘের দল ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার অফিসের জানালায় পড়া আলোতে এক নতুন স্বপ্নের রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একসময় এই শহর ছিল স্বাধীনতার সংগ্রামের অগ্নিকুণ্ড। এখানেই লাল সূর্য উঁকি দিয়েছিল যুদ্ধের ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে। আজও সেই শহরে আগুন জ্বলছে, তবে আর তা স্বাধীনতার সংগ্রামের নয়; এখন তা জ্বলছে রাজনৈতিক আলোয়, ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের দিকে।

এই শহরের প্রাণে দাঁড়িয়ে, ড. মোহাম্মদ ইউনুস, নোবেল পুরস্কৃত অর্থনীতিবিদ, শুধু অর্থনীতির মঞ্চেই নয়, বরং বাংলাদেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে, একসময় দুটি মেরু ছিল—একপক্ষ ভারতকে মেনে, দেশ পরিচালনার নীতি নির্ধারণ করত, যেন বাংলাদেশ ছিল ভারতের অধীন। অন্যপক্ষ চাইত, বাংলাদেশ পাকিস্তানের আদলে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করুক। এই দুই বিপরীত চিন্তা-ধারার মাঝে জনগণ হারিয়েছিল তাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় গর্ব।

কিন্তু এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছেন একজন নেতা, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুস। তিনি প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশ মানে বাংলাদেশ। ভারত বা পাকিস্তানের সাথে কোন তুলনা নয়; সম্পর্ক হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। যখন কিছু অংশ সরকারের মধ্যে ভারতবিরোধী অভিযোগ তুলেছিল, তখন ড. ইউনুস প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে ১৯৭১ সালের জন্য ক্ষমা চাইতে এবং ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করলেন। সেই সময়ের প্রোপাগান্ডা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।

ড. ইউনুসের কূটনীতি আজ বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। তিনি পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে ও ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছিলেন, যা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক পরিসরে একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশ ঘোষণা করেছে, আর সে কারো অধীন নয়, এবং ভারতকে একবার ভাবতে বাধ্য করেছে।

ভারত বহু বছর ধরে বাংলাদেশকে তার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। তিস্তা চুক্তি আটকে আছে, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড চলছে, অথচ দিল্লি এসব নিয়ে নীরব। এমন এক সময়ে, যখন পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, ভারতীয় কূটনীতি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। ভারতীয় জনগণ হয়তো প্রশ্ন তুলতে শুরু করবে, কেন পাকিস্তান অতীত ভুলে সম্পর্ক গড়ছে, অথচ ভারত এখনও আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে?

বছরের পর বছর, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশকে ভারত বা পাকিস্তানের ছায়া হিসেবে দেখানো হতো। কিন্তু এই কনভেনশন থেকে বেরিয়ে এসেছেন প্রফেসর ইউনুস। তার নেতৃত্বে আজ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এক নতুন দৃষ্টিকোণে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ আর কারো ছোট ভাই নয়, আজ বাংলাদেশ তার নিজের পরিচয়ে বড় ভাই হতে চায়।

শেখ হাসিনার বিদায়ের পর, ভারত যখন নতুন করে তার কৌশল নির্ধারণ করছে, তখন পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা ভারতীয় কূটনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। সামাজিক মাধ্যমে বিদ্রূপ ছড়াচ্ছে—ভারত যা করতে পারেনি, ইউনুস তা করে দেখাচ্ছেন। তাকে ভারতবিরোধী প্রমাণ করার চেষ্টা এখন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

এখন বাংলাদেশ আর ভারতের বা পাকিস্তানের ছায়া নয়; বরং তার নিজস্ব কূটনীতি এবং আত্মবিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন বহুমুখী, যেখানে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সৌদি আরব—সব দেশের সাথে ভারসাম্য রেখে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করছে।

বিকেল শেষ, সন্ধ্যা আসছে। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি অফিসের ছাদে বৈদ্যুতিক আলো জ্বলছে। ড. ইউনুস জানেন, দেশ কখনো সীমানা বা পারমাণবিক শক্তিতে বড় হয় না। নতুন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তি হল একটি দেশের কৌশলগত অবস্থান। ভারত ও পাকিস্তান যখন নিজেদের আধিপত্য নিয়ে ব্যস্ত, তখন বাংলাদেশ তার কৌশলগত অবস্থান ব্যবহার করে দক্ষিণ এশিয়ার গতিপথ নির্ধারণ করবে। এখন, ভারত বা পাকিস্তান যদি চোখ বন্ধ করে, তারা যতদূর নিজেদের দেশ দেখতে পায়, বাংলাদেশও ততদূরই দৃশ্যমান।

এটাই ইতিহাসের প্রথমবারের মতো: বাংলাদেশ আর কারো অনুগামী নয়; সে নিজেই পথ দেখাবে।

— সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ