ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২

ইরান নিয়ে এত উদ্বেগ কেন পশ্চিমাদের

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ২৯ ২২:১৬:৫৩
ইরান নিয়ে এত উদ্বেগ কেন পশ্চিমাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বে পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকায় ইতোমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এমনকি ইসরায়েলের মতো দেশগুলো। কেউ এসব অস্ত্রের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে, কেউ আবার অস্বীকার করেও বাস্তবে তা তৈরি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু যখন ইরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনা করে, তখনই শুরু হয় পশ্চিমা বিশ্বের তীব্র প্রতিক্রিয়া—নিষেধাজ্ঞা, হামলার হুমকি, এমনকি যুদ্ধের আশঙ্কা পর্যন্ত দেখা দেয়।

তাহলে প্রশ্ন উঠছে—অন্যান্য দেশ পারমাণবিক অস্ত্র রাখলেও সমস্যা নেই, অথচ ইরানকে নিয়ে এত ভয় ও অবিশ্বাস কেন?

বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক পক্ষপাত এবং পশ্চিমাদের দ্বিমুখী মানদণ্ড।

বর্তমানে বিশ্বের যেসব দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে, তাদের মধ্যে রাশিয়ার প্রায় ৬ হাজার, যুক্তরাষ্ট্রের ৫ হাজার ৪০০, চীনের আনুমানিক ৫০০, ফ্রান্সের ২৯০, যুক্তরাজ্যের ১২০, ভারতের প্রায় ১৬০, পাকিস্তানের আনুমানিক ১৭০ এবং উত্তর কোরিয়ার রয়েছে ২০ থেকে ৩০টি পারমাণবিক অস্ত্র। ইসরায়েল তাদের অস্ত্রের অস্তিত্ব স্বীকার না করলেও, ধারণা করা হয় তাদের হাতে রয়েছে প্রায় ১০০টি পারমাণবিক অস্ত্র।

অন্যদিকে, ইরান ১৯৬৮ সালের পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-তে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই চুক্তি অনুযায়ী, কোনো দেশ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করতে পারলেও, অস্ত্র তৈরি করা নিষিদ্ধ। উল্লেখযোগ্য যে, ভারত, পাকিস্তান ও ইসরায়েল এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি, ফলে তারা আইনের দৃষ্টিতে ‘চুক্তি ভঙ্গকারী’ নয়, যদিও নৈতিক প্রশ্ন থেকে যায়।

ইরান চুক্তিতে থাকলেও তাদের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের অবিশ্বাস প্রবল। বিশেষ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির শাসনব্যবস্থা, ইসলামি বিপ্লবী নীতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ সংগঠনগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক—সব মিলিয়ে পশ্চিমাদের দৃষ্টিতে ইরান একটি অনিশ্চিত এবং বিপজ্জনক শক্তি।

তাদের আশঙ্কা, ইরান একবার পারমাণবিক অস্ত্র হাতে পেলে তা আত্মরক্ষার জন্য নয়, বরং আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। ইরান ফিলিস্তিন, লেবাননের হিজবুল্লাহসহ বিভিন্ন প্রতিরোধ আন্দোলনের সরাসরি সমর্থক এবং ইসরায়েলের অস্তিত্বকেও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে থাকে।

বিশ্লেষকদের অনেকে বলেন, ইরান কখনোই প্রকাশ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করেনি। তবুও বছরের পর বছর তাদের ওপর আরোপ করা হয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা, বিজ্ঞানীদের হত্যা, সাইবার হামলা ও অর্থনৈতিক অবরোধ। অথচ একই সময়ে ভারত গোপনে অস্ত্র পরীক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে, ইসরায়েলের গোপন কর্মসূচি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠে না, আর উত্তর কোরিয়ার ধারাবাহিক পরীক্ষার পরও তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব।

তুলনামূলকভাবে ইরানের কর্মসূচি এখনও অস্ত্র নয়, গবেষণামূলক পর্যায়ে সীমিত থাকলেও, পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া যেন অনেক বেশি কঠোর।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরান বর্তমানে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা চাইলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অস্ত্র তৈরির উপযোগী করা সম্ভব। তবে সংস্থার মতে, ইরান এখনো কোনো পারমাণবিক বোমা তৈরি করেনি।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব রাজনীতিতে আজও সেই পুরনো নীতি চলছে—“যার শক্তি বেশি, নিয়ম বানানোর অধিকার তারই।” তাই ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম যতটা নিয়ে শঙ্কা দেখানো হয়, অন্যদের বেলায় তেমনটা দেখা যায় না। এ থেকেই অনেকের মনে প্রশ্ন—পারমাণবিক অস্ত্রের আশঙ্কা কি সত্যিই ইরান থেকেই, নাকি আসল সমস্যা পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি?

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ